পল্লীগীতি, ভাওয়াইয়া, ভাঁটিয়ালী গানের ক্ষেত্রে আব্বাসউদ্দিন যে খ্যাতি ও সুনাম অর্জন করেছিলেন, তা এক কথায় তুলনাহীন। ভাটিয়ালী ও পল্লীগীতির গায়ক হিসাবে ইতিহাসে তিনি চিরদিন অমর হয়ে থাকবেন। তার কণ্ঠে যে যাদু ছিলাে,
তেমন জাদু আর কারাে কণ্ঠে দেখা যায়নি। আব্বাসউদ্দিন কোনাে রাজসভার গায়ক ছিলেন না, তিনি বিভিন্ন সভায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান গাইতে যেতেন। তিনি যে গাইতে সে সভায় যেন মানুষের ঢল নামতাে। তিনি সাধারণ মানুষ থেকে শহুরে মানুষ সবার প্রিয় অতিপ্রিয় গায়ক ছিলেন। নজরুলের ইসলামী
এই অমর কণ্ঠশিল্পী আব্বাসউদ্দিন ১৯০১ সালে পশ্চিম বঙ্গের কুচবিহার জেলার বলরামপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শৈশবে বলরামপুরে, কুচবিহারে এবং কাজী নজরুল ইসলামের সহায়তায় কলকাতায় গিয়ে তিনি গ্রামােফোন রেকডে গান করেন।
তাঁর রেকর্ডকরা গানের সংখ্যা প্রায় সাতশাে । তিনিই লােকসঙ্গীতকে
শহুরে মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তােলেন। তার প্রথম ও দ্বিতীয় রেকর্ডকরা গান যথাক্রমে কোন্ বিরহীর নয়ন জলে/ বাদল ঝরে গাে ।-স্মরণ পারের ওগাে প্রিয় /
তােমার মাঝেই আপনহারা।'
আব্বাসউদ্দিনের কন্ঠে লােকগীতির নানা রূপই খুবই সুখশ্রাব্য ও শ্রুতিমধুর হতাে। ভাটিয়ালী, ভাওয়াইয়া, জারি, সারি, মুর্শিদী, দেহতত্ব, বিচ্ছেদি, চটকা,ক্ষিরােল প্রভৃতি নানা শ্রেণীর অজস্র লােকগান গেয়েছেন তিনি। বিখ্যাত দোতারা বাদক কানাইলাল শীল আব্বাসউদ্দিনকে লােকগীতি প্রচারে ও প্রসারে বিশেষ সহায়তা করেন।
আব্বাসউদ্দিন দেখতে খুব সুদর্শন ছিলেন। তিনি কয়েকটি সিনেমাতেও অভিনয় করেছিলেন। ছবিগুলাে হচ্ছে—বিষ্ণুমায়া, মহানিশা, একটি কথা ও ঠিকাদার।
আব্বাসউদ্দিনের স্ত্রীর নাম লুফুন্নেসা। সঙ্গীতশিল্পী মােস্তফা জামান আব্বাসী,ব্যারিস্টার মােস্তফা কামাল ও ফেরদৌসী রহমান আব্বাসউদ্দিনের সুযােগ্য পুত্রকন্যা।
১৯৪৭ সালে আব্বাসউদ্দিন কলকাতা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন এবং এখানেই স্থায়ীভাবে সববাস করতে শুরু করেন।
১৯৫৯ সালের ৩০শে ডিসেম্বর ৫৮ বছর বয়সে আব্বাসউদ্দিন ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।